Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪

কমিশনের কার্যালয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিনিধিদলঃ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্যে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস।


প্রকাশন তারিখ : 2024-10-28

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে গঠিত জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দলের প্রধান রোরি মুঙ্গভেনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল আজ ২৮ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ দুপুর ১২টায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্যে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দলকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন কমিশনের চেয়ারম্যান। পাশাপাশি, কমিশনকে শক্তিশালীকরণ এবং বর্তমান সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আলোচনা হয়। এ সময় কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মোঃ সেলিম রেজা, সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্র- জনতার বিক্ষোভ চলাকালে ও গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কমিশনে কী ধরনের অভিযোগ এসেছে এ বিষয়ে জানতে চান জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল। কমিশন চেয়ারম্যান তাদেরকে জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র- আন্দোলনের শুরু থেকেই কমিশন অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি, জুলাই মাসের প্রথম হতেই গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে অহিংস আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে, তাঁদের দাবীর ন্যায্যতা বিষয়ে একমত প্রকাশ করে সরকারসহ সকল পক্ষকে শান্তিপূর্ণ সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। এরপরই আন্দোলনে সহিংসতা ও প্রাণহাণির ঘটনায় গভীর শঙ্কা প্রকাশ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধানের লক্ষ্যে কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) ও জেলা ও দায়রা জজ এর নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটি কাজের প্রয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আহত-নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবার, হাসপাতালের চিকিৎসক, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সমন্বয়কারীসহ সর্বমোট ১১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে, কমিটি একটি বিস্তৃত তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে।

আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় কমিশন উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং সুয়োমটো অভিযোগ আমলে নিয়ে উক্ত মর্মান্তিক মৃত্যুর দায় নিরূপণপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করে। এছাড়াও, জাতিসংঘের নিকট আন্দোলনের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আহত শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের সাথে সাক্ষাৎ, তাদের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিতকরণ, ব্লক রেইডের মাধ্যমে গণগ্রেফতার বন্ধ করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের মাধ্যমেই শুধু আইন প্রয়োগের নির্দেশনা প্রদান করেছে। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহেও কমিশন প্রাণহানি বন্ধ করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে সরকার ও সকল পক্ষকে উদাত্ত আহ্বান জানায়। কমিশনের এ সকল কর্মকাণ্ড মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে এবং কমিশনের ফেসবুক পেজে সবসময় দেখার সুবিধাসহ এগুলোর প্রতিফলন রয়েছে মর্মে তাদেরকে জানান কমিশন চেয়ারম্যান।

আলোচনাকালে মানবাধিকার কমিশনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে চান প্রতিনিধিদল। কমিশন চেয়ারম্যান তাদেরকে জানান, মানবাধিকার একটি বিস্তৃত ধারণা, তাই মানবাধিকার কমিশনের কাজের পরিধিও ব্যাপক। নারীর প্রতি বৈষম্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, শিশু নির্যাতন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কমিশন সব সময় সোচ্চার থেকেছে এবং জনসাধারণের বিপুল সংখ্যক অভিযোগের তদন্ত ও কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে অনেক নাগরিককে সুবিধা প্রদান করতে সক্ষম হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের ক্ষমতা কমিশনের আইনে কমিশনকে দেয়া হয়নি।
কমিশন আয়নাঘর সৃষ্টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততা থাকলে শুধুমাত্র সরকারকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে কমিশন সরাসরি তদন্ত করতে না পারায় জনগণের মাঝে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হয়। ফলে, কমিশন যখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত কোন অভিযোগ তদন্ত করতে পারেনা তখন কমিশনকে অনেকে না জেনে সমালোচনা করে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত গুম বিষয়ক কমিশনকে বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের উপরও সকল সকল ধরনের তদন্তের এখতিয়ার দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকেও এ ধরনের এখতিয়ার দেয়া হলে কমিশন আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারতো ও পারবে। কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালীকরণের সরকারের আমলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিলেও কোনো ফলপ্রসূতা আসেনি তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এ ব্যাপারে সহসাই প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। আইনের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারলে কমিশন শক্তিশালী হয়ে উঠবে। জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল কমিশনকে শক্তিশালীকরণের প্রয়োজনীয়তা ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার ফলকার টুর্কের নিকট উপস্থাপন করবেন মর্মে আশ্বাস প্রদান করেন। উল্লেখ্য, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন কাজের সুবিধার্থে কমিশনের নিকট বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে।