মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার যে কোনো ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা প্রদানসহ মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বদ্ধপরিকর। কমিশন লক্ষ্য করেছে যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনায় সহায়-সম্বলহীন এবং অসহায় ভুক্তভোগীগণ বিশেষ করে আর্থসামাজিক কারণে মামলা করতে অসমর্থ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী মামলা লড়তে অসমর্থ হওয়ায় ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ভুক্তভোগীদের বিচার প্রাপ্তির পথ সহজ ও সুগম করার লক্ষ্যে কমিশন সারা দেশের ৬৪ টি জেলার প্রায় ২৫০ জন বিজ্ঞ আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি প্যানেল গঠন করেছে। কমিশনের প্যানেল আইনজীবীগণ কমিশনের পক্ষে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার অসহায় ও দরিদ্র ভুক্তভোগীদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করছে এবং তাদেরকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্যানেলভুক্ত আইনজীবীগণ যাতে মানবাধিকার সুরক্ষায় অর্পিত দায়িত্ব এবং করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন সেলক্ষ্যে ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখ সকাল ১০.০০ টায় কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় প্যানেল আইনহজীবীগণের ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালা’ অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান জনাব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমিশনের মাননীয় সার্বক্ষণিক সদস্য মোঃ সেলিম রেজা। মাননীয় প্রধান বিচারপতি উক্ত কর্মশালার উদ্বোধন করেন এবং প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়েছিল ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, জাতীয় ৪ নেতার হত্যা এবং এই হত্যাকাণ্ডের খুনিদের বিচারের আওতায় না আনার জন্য ইনডেমনিটি এক্ট পাস করা। তিনি আরও বলেন, মৌলিক অধিকার আর মানবাধিকারের পার্থক্য রয়েছে। মৌলিক অধিকার একেক দেশে একেক রকম, কিন্তু, মানবাধিকার সারা বিশ্বে এক রকম। আমাদের দেশে প্রাচীন কাল থেকে মানবাধিকারের ধারণা নানা মাত্রায় প্রকাশিত হয়েছে। মানবাধিকার প্রয়োগ হয় আইন প্রয়োগের মাধ্যমে। এজন্য আইন বিভাগ আছে আইন প্রনয়নের লক্ষ্যে। আর বিচার বিভাগ আছে আইন প্রয়োগের প্রয়োজনে। আর সেই আইন প্রযুক্ত হয় আইনজীবীদের কর্মকুশলতায়। মানবাধিকারের সঙ্গে তাই আইনজীবীদের সম্পর্ক আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। তাঁদের জন্য আয়োজিত আজকের এই কর্মশালা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। মানবাধিকার কমিশনের প্যানেল আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিচার প্রার্থীদের পাশে দাঁড়ালে মনে রাখবেন আপনি মানবাধিকার কর্মী। নিজ পেশার প্রতি মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ হোন। তিনি মানবাধিকার কমিশনকে হাজতে থাকলে হাজতবাসীদের জন্য খাবারের বাজেট আছে কিনা; দীর্ঘদিন বিনা বিচারে কারাগারে যারা আছেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালে মানসিক রোগী না হয়েও যারা আটক আছেন তাদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ সবার মানবাধিকার আছে। অতিরিক্ত বল প্রয়োগ আন্দোলনকারী পুলিশ কারোরই উচিত নয়। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে কোনদিন মানুষ একটি সুন্দর সমাজ পাবেনা।
কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “মানবাধিকার সুরক্ষা, উন্নয়ন ও সুসংহত করণের লক্ষ্যে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে আইনগত সহায়তা প্রদানে কমিশন প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় প্যানেল আইনজীবীগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে মর্মে কমিশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। অসহায়, নিপীড়িত মানুষ যেমন নিগৃহীত নারী, অসহায় মা আইনের দুয়ারে গিয়ে কাজ করতে পারেনা। তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে প্যানেল আইনজীবীগণ অত্যন্ত নিষ্ঠা, সততা, দায়বদ্ধতা ও সর্বোচ্চ সংবেদনশীলতার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, কমিশন সরকারি নয়। স্বাধীনভাবে কাজ করে। গণমাধ্যমের প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কমিশন গৃহীত খবর প্রচার করার আহবান জানান। এতে জানলে মানুষ জানবে প্রতিকার পাবে।
বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সরকারের সংগঠন নয় প্রমাণ করে দিয়েছে। যেমন কমিশন পুলিশের গুলিতে আহত লিমনকে আদালতে তার অধিকার আদায় করে দিয়েছিল। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার কমিশনকে সাধুবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, আর্থিক অসছলতার কারনে অনেকেই আদালতে আসতে পারেনা।এরকম জনগোষ্ঠীসহ গৃহকর্মী, মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তায় আইনজীবীদের কাজ করার আহবান জানান তিনি।
উদ্বোধনী পর্বের পর প্যানেল আইনজীবীগণের মানবাধিকার সুরক্ষায় করণীয় সংক্রান্ত দুটি ওয়ার্কিং সেশন মডারেট করেন কমিশনের মাননীয় সার্বক্ষণিক সদস্য মোঃ সেলিম রেজা এবং পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মোঃ আশরাফুল আলম। সমাপনী সেশনে কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান বিজ্ঞ প্যানেল আইনজীবীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।