১০ ডিসেম্বর ২০২৩ রবিবার সকাল ১১টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আয়োজনে মানবাধিকার দিবস ২০২৩ উদযাপিত হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মোঃ সাহাবুদ্দিন উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আনিসুল হক, এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যন ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মোঃ সেলিম রেজা, বেসামরিক ও সামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সিনিয়র সচিব ও সচিবগণ এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সম্মানিত অতিথিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সকলকে মানবাধিকারের মর্ম ও গভীরতা উপলব্ধি করতে হবে। মানবাধিকার নিছক তাত্ত্বিক ধারণা নয়। মানবিক মর্যাদা রক্ষা, ন্যায়সঙ্গত ও সাম্যবাদী সমাজ নিশ্চিত করার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবাধিকার রক্ষা ও তাঁর উন্নয়নের প্রধান দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র তার প্রশাসন, বিচার ও আইন বিভাগের মাধ্যমে জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করবে এবং করে যাচ্ছে’। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সক্রিয় কার্যক্রমের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং কমিশনকে সাধুবাদ জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশের গৃহীত বেশ কিছু কার্যক্রম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ বিস্তার, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক নানা সূচকে তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে’।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি আরও উল্লেখ করেন, ‘কোভিড-১৯ অতিমারি পরিস্থিতিতে মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়, বিশ্ব পরিবারের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশ মানবাধিকার সুরক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে’।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং স্বার্থান্বেষী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার জন্য ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন।
মাননীয় আইনমন্ত্রী জনাব আনিসুল হক তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান উপহার দেন সে সংবিধানে মৌলিক চাহিদার সবকিছু ছিলো এবং এগুলোকে আমরা মানবাধিকার হিসেবে বা মানবাধিকারের সংজ্ঞা হিসেবে উল্লেখ করছি। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে কেউ গৃহহীন থাকবে না, জননেত্রী শেখ হাসিনার এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং এটিকে আমরা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ হিসেবে দেখি’।
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে অনেক লম্বা লম্বা কথা বলা হয়, ২০০৯ সালের পূর্বে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ছিলো মাত্র ৮০০ টাকা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথমে এটিকে প্রথমে ১০৫০ এবং তারপর ধাপে ধাপে ১২,৪০০ টাকায় পরিণত করেছেন। যেসব আইনে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় তিনি সেসব আইন ও বিধি করে দিয়েছেন’।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান জনাব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ফলে জনগণের জানমালের ক্ষতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ব্যক্তিজীবনে রাজনৈতিক অধিকারের গুরুত্ব যেমন রয়েছে, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারও তেমন রয়েছে। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসায় অধিকার অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। অন্যথায় নাগরিক অধিকারগুলো তাঁর কাছে অর্থহীন হয়ে যায়’। কমিশনের চেয়ারম্যান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার ধারণাটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকান্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাননীয় সার্বক্ষণিক সদস্য জনাব মোঃ সেলিম রেজা বলেন, আমাদের সংবিধানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সকল মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। মানবাধিকার সুরক্ষিত ও সমুন্নত রাখতে মানবাধিকার চর্চার বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে কমিশন কর্তৃক প্রয়োজনীয় গবেষণা, পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নারী, শিশু, দলিত, হিজড়া, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রবাসী কর্মীসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় ১২টি বিষয়ভিত্তিক থিমেটিক কমিটি নিয়মিত পরামর্শ সভার মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনসমূহ চিহ্নিত করে সরকারের নিকট প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রেরণ করছে। সরকার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে কমিশন। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দেশের যে কোনো প্রান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অবগত হওয়ার সাথে সাথেই সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে।