কাজী রিয়াজুল হক মানবাধিকারের বিষয় বিশেষত শিশু, নারী, প্রবীণ ও অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে এক দশক ধরে একনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। তিনি ২০১৬ সালের ২ অগাস্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন। ইতিমধ্যে তিনি ২০১০ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের ২২ জুন পর্যন্ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য পদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
কাজী রিয়াজুল হক বাংলাদেশ সরকার ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ইউনির্ভাসেল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর)-এ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের ফোকাল পয়েন্ট ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে রাষ্ট্রপক্ষ, নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে পরামর্শসাপেক্ষে কমিশন এ ইউপিআর প্রতিবেদন তৈরি করে। তিনি কমিশনের পক্ষ থেকে এ ইউপিআর প্রতিবেদন জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন।
জনাব হক জাতিসংঘ কর্তৃক প্রবীণদের অধিকার সংক্রান্ত সনদ আইন ও নীতিমালা প্রণয়নে এশিয়া প্যাসিফিক ফোরামের ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। তিনি জাতিসংঘের আমন্ত্রণে ইউএন সদর দপ্তরে প্রবীণদের অধিকার সুরক্ষব বিষয়ে কর্মপ্রত্র উপস্থাপন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রবীণদের অধিকার বিষয়ে আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ করেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য জেনেভায় জাতিসংঘ অফিসে বাংলাদেশে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গৃহীত কার্যক্রমের ওপর কর্মপত্র উপস্থাপন করেন যা আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশংসিত হয়। তিনি কমনওয়েলথ ফোরাম ফর ন্যাশনাল হিউম্যন রাইটস ইনস্টিটিউটের (সিএফএনআইচআরআই) আমন্ত্রণে জেনেভায় অনুষ্ঠিত মানবাধিকারকর্মীদের সুরক্ষা বিষয়ে অতিথি বক্তা হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করে পুরস্কৃত হন। এছাড়াও তিনি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে শিশু অধিকারসহ মানবাধিকার সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর তার সুগভীর চিন্তন তুলে ধরেন।
জনাব হক জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিষয়ভিত্তিক কমিটির মূল উদ্যোক্তা। বিষয়ভিত্তিক কমিটি গঠন কমিশনের কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ ও কমিশন সদস্যদের মধ্যে কর্মদায়িত্ব বণ্টনে প্রশংসনীয় উদ্যোগে হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি মানবাধিকার কমিশনের পাঁচ বছরমেয়াদি কর্মকৌশল নির্ধারণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কমিশনের শিশু অধিকার, বিজনেস এন্ড হিউম্যান রাইটস ও অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার বিষয়ক কমিটি সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শিশু আইন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ও প্রতিবন্ধীদের অধিকার, শিশুশ্রম বন্ধে নীতিমালা ও মানবপাচার প্রতিরোধ আইন নিয়ে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। উপর্যুক্ত আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সময় কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট লিখিত সুপারিশ পাঠানো হয়। জনাব হক নাগরিক সমাজের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এসব সুপারিশ প্রণয়ন করেন। তিনি নাগরিক সমাজ, আন্তজার্তিক সম্প্রদায়, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা শ্রেণির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছেন।
কাজী রিয়াজুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সণাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপেস্নামা ডিগ্রি অর্জন করেন। অধিকন্তু, তিনি থাইল্যান্ডের এশিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এআইটি), ব্রিটেনের সিভিল সার্ভিস কলেজ, বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ল’ ইনস্টিটিউট থেকে ব্যবস্থাপনা, পাবলিক পলিসি ও আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন।
জনাব রিয়াজুল হক প্রায় ৩০ বছর বাংলাদেশ সরকারের সচিব, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার ও পলস্নী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। একইসঙ্গে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায়ও উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা রাখেন তিনি। তিনি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইউনেস্কো, বাংলাদেশ-এর সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
কাজী রিয়াজুল হক সরকারি উদ্যোগে দারিদ্র্য বিমোচনে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান পলস্নী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় পল্লী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়নে মূখ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি খুলনার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়া শ্বশুর বাড়ি উদ্ধার করেন। তিনি খুলনার গল্লামারিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করেন এবং খুলনা শিশু হাসপাতাল ও খুলনা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট-এর নির্বাহী পরিচালক পদে চার বছরের অধিক দায়িত্ব পালনকালে শিশু অধিকার ও জুভেনাইল জাস্টিস, মানবপাচার ও অভিবাসন বিষয়ে অনেকগুলো প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করেন। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ এসব প্রশিক্ষণে রিসোর্সপারর্সন হিসেবে সেশন পরিচালনা করেন। ইউনিসেফ, ইউএসএআইডি, ইউএনডিপি, আইওএম এবং অস্ট্রেলিয়ার বার এসোসিয়েশনের সহায়তায় এসব কর্মসূচি বাসত্মবায়িত হয়।
মানবাধিকার, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজসেবামূলক কাজে কাজী রিয়াজুল হকের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কমিশনের প্রতিনিধিত্ব ও গবেষণাধর্মী উপস্থাপনার ফলে অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান তাঁকে আজীবন সদস্যপদ প্রদান করেছে।